কিছুদিন পূর্বে বর্নিত অপরাধেরর ভুক্তভোগী জনৈক আলু ব্যবসায়ী মাসুদ রানা(৩৬), পিতা- মোঃ নজরুল ইসলাম, সাং-দেউতি গিলাপাড়া, থানা- পীরগাছা, জেলা- রংপুর এর প্রতারক মোঃ রুবেল (৩০), পিতা- মোঃ আবু সাইদ, মাতা- মোছাঃ বেগম রোকেয়া, সাং- কামাল কাছনা চিড়ার মিল, ওয়ার্ড নং-২৪, থানা- কোতয়ালী, রংপুর মহানগর এর সাথে পরিচয় হয়। উক্ত রুবেল এর কামাল কাছনা চিড়ার মিল এর পাশে একটি গ্রিলের দোকান আছে।
গ্রিল দোকানদার রুবেলের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানা হতে আগত রাজমিস্ত্রী জনৈক ০১। মোঃ মিরাজুল ইসলাম (২৮), পিতা- মোঃ রহমত আলী, সাং- চর বেরুবাড়ী, থানা- নাগেশ্বরী, জেলা-কুড়িগ্রাম এর সাথে বাদীর পরিচয় হয়। পরবর্তীতে উক্ত মোঃ মিরাজুল ইসলাম এর সাথে রুবেলের ফোনালাপ হয় এবং মিরাজুল জানায় দুপচাঁচিয়া থানা, বগুড়ায় তার পরিচিত মনসুর ফকির নামক এক ব্যক্তির খালা স্বপ্নের মাধ্যমে একটি স্বর্ণের মূর্তি পেয়েছেন। মূর্তিটি অনেক দামি ও বিরল। ভালো গ্রাহক পেলে মূর্তিটি বিক্রয় করবেন। তখন রুবেল তার বন্ধু (ক) মোঃ আবুল হোসেন @ খুশু (৩০) ও (খ) মোঃ সুজন মিয়া (৩০) দের সাথে আলোচনা করে এবং তাদের মাধ্যমে বাদী বিষয়টি অবগত হয়।
পরবর্তীতে মূর্তিটি দেখার জন্য গত ২৮/০৪/২০২১ খ্রি. রাত আনুমানিক ২২.৩০ ঘটিকার সময় মাহিগঞ্জ থানাধীন আমতলি মোড় এর পূর্ব পাশে পীরগাছাগামী রোডস্থ ফাকা রাস্তায় রুবেলের মাধ্যমে বগুড়ার দুপচাচিয়া থেকে আগত মনসুর ফকির এর সাথে বাদীর পরিচয় হয় এবং গ্রেফতারকৃত আসামী মিরাজুল এর মাধ্যমে বাদীকে একটি কথিত স্বর্ণের মূর্তি দেখানো হয়। স্বর্ণের মূর্তির বিষয়ে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতারক চক্র বাদী মাসুদকে কথিত স্বর্ণের মূর্তি থেকে ছোট্ট এক টুকরো কৌশলে ভেঙে দেন। প্রতারক চক্র বাদীকে বলেন এটি পরীক্ষা করে প্রকৃত স্বর্ণ মনে হলে মূর্তিটি ক্রয় করবেন নতুবা ক্রয় করবেন না।
বাদী তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ছোট্ট স্বর্ণের টুকরাটি নিকটস্থ স্বর্ণকার দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে প্রকৃত স্বর্ণ বিষয়ে আশ্বস্ত হন। এরপর রাতে বাদী মাসুদ রানা সরল বিশ্বাসে উক্ত মূর্তিটি ক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করলে মূর্তিটির দাম ৪,০০,০০০/- (চার লক্ষ) টাকা ঠিক হয়। তখন বাদী স্বর্ণের মূর্তিটি প্রাপ্তির লক্ষ্যে মাহিগঞ্জ থানাধীন আমতলি মোড় এর পূর্ব পাশে পীরগাছাগামী রোডস্থ ফাকা রাস্তায় ২,৬০,০০০/-(দুই লক্ষ ষাট হাজার) টাকা মনসুর ফকিরকে প্রদান করেন। কিন্তু পরোক্ষণেই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্যদ্বয় বাদীর সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বাদিকে ঠকিয়ে মূর্তিটি প্রদান না করে টাকা নিয়ে কৌশলে পলিয়ে যায়। বিষয়টিই মাসুদ রানা তার বিশ্বস্ত লোকজনদের অবহিত করলে জানতে পারেন যে তিনি একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে আইনগত সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে, অত্র অফিসে ভুক্তভোগী প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করলে, রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশ উক্ত প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্যদের সনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। এরপর বিভিন্ন উৎস থেকে অপরাধীদের বিষয়ে অপরাধ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২/০৫/২০২১ খ্রি. রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান মহোদয়ের নির্দেশনা ও তত্ত¡াবধানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব মোঃ ফারুক আহমেদ এর অপারেশন পরিকল্পনায় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ ছালেহ্ আহাম্মদ পাঠান, এসআই (নিঃ) বাবুল ইসলাম, এসআই (নিঃ) ছাইয়ুম তালুকদারসহ ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানাধীন বেরুবাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক মোঃ মিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদসহ ডিবির আরেকটি চৌকসদল বগুড়া জেলার দুপচাচীয়া থানা এলাকায় প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে এবং উক্ত অপরাধের কর্মকৌশল ও সার্বিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য সংগ্রহ করেন। উক্ত অপরাধের সাথে আরো অনেক অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।
এহেন প্রতারণামূলক অপরাধের সাথে জড়িত অন্যান্য সকল অপরাধীদের তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রতারক চক্রের সকল সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মাহিগঞ্জ থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। যা মাহিগঞ্জ থানার মামলা নং-১২, তাং-২৪.০৫.২০২১, ধারা- ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড।